বিশ্বের অন্যতম সেরা ১০ টি ফুটবল স্টেডিয়াম

বিশ্বের অন্যতম সেরা ১০ টি ফুটবল স্টেডিয়াম




ফুটবল হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা যে খেলাটি দেখার জন্য মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে থাকে। এছাড়া এই খেলাটি পরিচালনার জন্য মানুষ বিলিয়ন ডলার খরচ করে স্টেডিয়াম তৈরি করে। তাই পৃথিবীর অনেক দেশ এমনও কিছু স্টেডিয়াম স্থাপন করেছে এগুলোর আকার,আকৃতি এবং দর্শক ধারণ ক্ষমতার কথা সবাইকে অবাক করিয়ে দেয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০টি ফুটবল স্টেডিয়াম কোন কোন দেশে অবস্থিত এবং এর ধারণক্ষমতা কতটুকু।


১০.মেটলাইফ স্টেডিয়াম 


মেটলাইফ স্টেডিয়াম হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম গুলোর মধ্যে একটি। এই স্টেডিয়ামটি তৈরিতে মোট খরচ হয়েছে ১.৬ বিলিয়ন ডলার যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ব্যবহার স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির প্রাক্তন নাম ছিল নিউ মেডোল্যান্ডস স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির অবস্থান হলো আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে 5 মাইল (8 কিমি) পশ্চিমে, নিউ জার্সিতে। এটি ২০১০ সালে উদ্বোধন করা মাল্টিপারপাস স্টেডিয়াম। বর্তমানে স্টেডিয়ামটা ধারণ ক্ষমতা ৮২৫০০ টি। এই স্টেডিয়ামটিতে এনে পেলের মতো বড় বড় সব হাই ভোল্টেজ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।  এছাড়া বিশ্বসেরা স্টেডিয়ামটিতে দামি দামি সব টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে।  2026 ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনাল হোস্ট করার জন্যও নির্ধারিত রয়েছে এই স্টেডিয়ামটিকে।বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম গুলোর মধ্যে ঐই স্টেডিয়ামটি ১০ নম্বর স্থানে জায়গা পেয়েছে। 

৯.সল্টলেক স্টেডিয়াম   


  সল্টলেক স্টেডিয়ামটি বর্তমানে বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন নামে সুপরিচিত। সল্টলেক স্টেডিয়ামটি ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি মাসে উদ্বোধন করা হয়। একটি বহুমুখী স্টেডিয়াম হিসেবে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুটবল স্টেডিয়াম হিসেবে বর্তমানে রয়েছে এই সল্টলেক
স্টেডিয়ামটি। ২০১১ সংস্কারের পূর্বে স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা ছিল ১,২০,০০০ জন।২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এই মাঠের ধারণ ক্ষমতা ৮৫,০০০ জন।দর্শক ধারণ ক্ষমতা দিক থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম এটি। স্টেডিয়ামটির অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধাননগরে।এই মাটিতে রেকর্ডসংখ্যক দশ হয়েছিল ১৯৯৭ সালে মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচটিতে যেখানে মোট দর্শক ছিল ১,৩১,৭৮১ জন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামের মধ্যে এই স্টেডিয়ামটি লিস্টের ৯ নম্বরে স্থান পেয়েছে। 

৮.বোর্গ এল-আরব স্টেডিয়াম


 বোর্গ এল-আরব স্টেডিয়ামকে কখনো কখনো  মিশরীয় আর্মি স্টেডিয়াম বা এল-গিশ স্টেডিয়াম নামে অভিহিত করা হয়।  এই স্টেডিয়ামটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে মিশরের আমরেয়া ; আলেকজান্দ্রিয়া  থেকে 25 কিমি পশ্চিমে।  স্টেডিয়ামটির বিপুল দর্শক ধারণ ক্ষমতার অধিকারে এটি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বের বড় বড় ফুটবল স্টেডিয়ামের ছোট তালিকার  ৮ম অবস্থান।এই স্টেডিয়াম মিশরের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম এবং আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির সর্বমোট দর্শন ধারণ ক্ষমতা ৮৬,০০০ জন এবং সর্বোচ্চ  ৮৬,০০০ জন দর্শক হয়েছিল মিশরে এবং কঙ্গোর মধ্যকার ম্যাচটিতে এবং ম্যাচটিতে মিশর  ২-১ গোলে জয়লাভ করে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলার টিকিট অর্জন করেছিল। এছাড়াও এটি বিশ্বের ৯তম বৃহত্তম অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল স্টেডিয়াম। 

৭.বুকিত জলিল জাতীয় স্টেডিয়াম 


বুকিত জলিল জাতীয় স্টেডিয়াম  মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে  অবস্থিত একটি  বহুমুখী স্টেডিয়াম যা মালয়শিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম স্টেডিয়াম হিসেবে সুপরিচিত।  এই স্টেডিয়ামটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এবং স্টেডিয়াম দ্বিতীয় সংস্করণ হয় ১৯৯৮ সালে তারপর থেকে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় স্টেডিয়াম গুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করে। স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছিল ১,০০,০০০ জন এবং ২০১৭ সালে তৃতীয় সংস্করণের পর বর্তমানে এটির ধারণ ক্ষমতা ৮৭,৪১১ জন। বুকিত জলিল জাতীয় স্টেডিয়ামটিতে ১৯৯৮ সাল থেকে কমনওয়েলথ গেমস সহ সাউথ এশিয়ান গেম এবং অসংখ্য কালচারাল প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে। স্টেডিয়ামটি   তৈরিতে ১.৪ বিলিয়ন রিয়াল খরচ করা হয়েছে। 

৬.আসতেকা স্টেডিয়াম


আসতেকা স্টেডিয়ামটিকে স্থানীয়ভাবে এস্তাদিও আসতেকা নামে অভিহিত করা হয়। বিখ্যাত এই স্টেডিয়ামটি মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে অবস্থিত। স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয়েছে মেক্সিকোর দর্শনীয় স্থান আক্তেচ এর নাম অনুসারে। স্টেডিয়ামটির সর্বোচ্চ দর্শক ধারণ ক্ষমতা  ১,২০,০০০ জন হলেও বর্তমান তথ্য অনুযায়ী স্টেডিয়ামটির ধারণ ক্ষমতা ৮৭,৫২৩ জন।এই স্টেডিয়ামটিতে  ২টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে পৃথিবীর অন্য কোন স্টেডিয়ামে হয়নি। স্টেডিয়াম ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দিয়াগো ম্যারাডোনা সেই বিখ্যাত গোল দুটি করেছিলেন যার একটি হ্যান্ড অফ গড নামে পরিচিত এবং দ্বিতীয়টি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে বিবেচিত হয় এছাড়াও শতাব্দীর সেরা খেলা হিসেবে বিবেচিত ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইতালি বনাম জার্মানির মাধ্যাকর খেলাটিও এ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এবং অসংখ্য ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে এই বিখ্যাত স্টেডিয়ামটি। 

৫. ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম


ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামটি ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের ওয়েম্বলিতে অবস্থিত। বিখ্যাত স্টেডি দ্বিতীয়বারের মতো উদ্বোধন করা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৮ সালে। ১০৫ বাই ৬৮ মিটারের মাঝ মাঠ সহ সম্পূর্ণ স্টেডিয়ামটি তৈরিতে মোট খরচ হয়েছে ১.২৭ মিলিয়ন ইউরো। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামটির তার দর্শক ধারণ ক্ষমতার সাথে সাথে রয়েছে নানামুখী সৌন্দর্য রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। ফুটবল, রাগবি সহ বক্সিং এর মতো জনপ্রিয় সব খেলা আয়োজিত হয়ে থাকে এই স্টেডিয়ামটিতে। এটি চালু হবার পর থেকে একে "নতুন ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম" নামে ডাকা হচ্ছে পুরাতন মূল ওয়েম্বলি থেকে পার্থক্য বোঝানোর জন্য। বিশ্বসেরা এই স্টেডিয়ামটির মোট দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৯০,০০০ জন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামের মধ্যে এটি তালিকার ৫ম স্থানে রয়েছে।

৪.রোজ বোল


আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম গুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রথমে রয়েছে রোজ বোল স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার, পাসাডেনাতে অবস্থিত।বিখ্যাত স্টেডিয়ামটিকে ১৯২২ সালে উদ্বোধন করা হয় এবং উদ্বোধনের পর থেকে নানামুখী ইতিহাসের সঙ্গী হতে থাকে এই স্টেডিয়ামটি। এ মাঠে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ সহ মোট ৮টি ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছিল এবং এই ফাইনাল ম্যাচটিতে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছিল ইতালি উক্ত খেলাটিতে নির্ধারিত সময়ে কোনে দল গোল করতে না পারলে খেলাটি শেষ হয় পেনাল্টিতে এবং পেনাল্টিতে ৩-২ গোলে জয়লাভ করেছিল ব্রাজিল। বিখ্যাত এই স্টেডিয়ামটির সর্বচ্চ দর্শক ধারন ক্ষমতা ১০৬,৮৬৯ জন যেটি রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে কিন্তু স্বাভাবিকভাবে স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা ৯২,৫৪২ জন। স্টেডিয়ামটি তৈরিতে মোট খরচ হয়েছিল প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবল  স্টেডিয়াম গুলোর মধ্যে রোজ বোল স্টেডিয়ামটি  তালিকার চার নম্বরে স্থান পেয়েছে। 

৩.এফএনবি স্টেডিয়াম


এফএনবি স্টেডিয়াম বা ফার্স্ট ন্যাশনাল ব্যাংক স্টেডিয়াম দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আফিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সুন্দরতম স্টেডিয়াম এটি যেটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে এবং উদ্বোধন করা হয়েছে ১৯৮৯ সালে। এরপর দৃষ্টিনন্দন এই স্টেডিয়ামটি লিখতে থাকে একের পর এক নতুন  ইতিহাস। এই স্টেডিয়ামটি ২০১০ সালে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ আয়োজন করেছেল এই ফাইনাল ম্যাচটিতে স্পেনের মুখোমুখি হয়েছিল নেদারল্যান্ডস এছাড়াও আফ্রিকান ফুটবলের সবচেয়ে সম্মানের আসর আফ্রিকান কাপ অব নেশনের ২টি ফাইনাল ম্যাচ সহ বেশ কয়েকটি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এই স্টেডিয়ামটিতে। বর্তমানে এই স্টেডিয়ামটির মোট  দর্শক ধারন ক্ষমতা ৯৪,৭৩৬ জন এবং এই স্টেডিয়ামটি তৈরিতে মোট খরচ হয়েছিল ৩.৫ বিলিয়ন জার। এছাড়াও এই স্টেডিয়ামটি ক্যালাবাস স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। 

২.কাম্প ন্যু

 
 কাম্প ন্যু স্টেডিয়াম স্পেনের বার্সেলনাতে  অবস্থিত। এই স্টেডিয়ামটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৫৪ সালে এবং নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৫৭ সালে এবং স্টেডিয়ামটি উদ্বোধনের সময় এর ধারণ ক্ষমতা ছিল ১০৬,১৪৬ জন। এরপর অনেকবার নতুনভাবে সংস্করণের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এই স্টেডিয়ামটিকে যার কারনে এর ধারণ ক্ষমতা পরিবর্তিত হয়ে যায়। অতঃপর ১৯৮২ সালে এটি নতুন করে সংস্করণের ফলে এর মোট দর্শক ধারণ ক্ষমতা হয় ১২১,৭৫৯ জন কিন্তু বর্তমানের এর জনসংখ্যা ধারণ ক্ষমতা কমে  ৯৯,৫৫৪ জন হয়েছে। শুধু দর্শক ধারণ ক্ষমতার দিক থেকেই নয় অসংখ্য ইতিহাস এবং সৌন্দরর্যের দিক থেকেও এটি  বিশ্বের অন্যতম একটি ফুটবল স্টেডিয়াম। 

১.রংগ্রাডো ১লা মে স্টেডিয়াম


বর্তমানে এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম হলো উত্তর কোরিয়ার রংগ্রাডো স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামটি উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের রুংরা দ্বীপে অবস্থিত তাই এর নামকরণ করা হয়েছে রুংরা দ্বীপের নাম অনুসারে। ১৯৮৯ সালের ১লা মে আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্টেডিয়ামটির   উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছরই দিনে সমগ্র দেশ জুড়ে এই স্টেডিয়ামটির উদ্বোধনী দিন আয়োজন করা হয়। ১৯৮৯ সালে স্টেডিয়ামটিতে প্রথমবারের মতো ১৩ তম বিশ্ব কিশোর ও শিক্ষামেলার আয়োজন করা হয়েছিল। ৮দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২২,০০০ প্রতিনিধি ও দর্শনার্থী অংশ নেয়।বর্তমানে স্টেডিয়ামটি ফুটবল মাঠে হিসাবে সুপরিচিত কিন্তু বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা, রাজনৈতিক সমাবেশ বা বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে স্টেডিয়ামটি। বর্তমানে স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা ১১৪,০০০ জন তবে এটি ১৫০,০০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতা  দিতেও সক্ষম এবং একটি অবাক করা বিষয় হচ্ছে স্টেডিয়ামটি মোট ৫১ একর জায়গার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post